শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন

কী চায় হেফাজত ?

কী চায় হেফাজত ?

0 Shares
অনলাইন ডেস্ক: কী চায় হেফাজত? বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন এখন এটি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার পর মোদি বিরোধী অবস্থান নেয়ায় হেফাজতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ইসলামকে হেফাজত করার কথা বলে তারা কী রাজনীতিতে যুক্ত হতে চাচ্ছে? এ নিয়ে সারা দেশে চলছে নানা আলোচনা। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থান নিয়ে হেফাজত যে জামাতের চেতনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের শেল্টারেই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, দেশজুড়ে চালাচ্ছে নাশকতা। তাদের উদ্দেশ্য একটাই- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করা। কিন্তু একের পর এক অপপ্রয়াস চালালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে তা বাস্তবায়ন করতে পারছে না হেফাজত। এর ফলে হেফাজতকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে চারদিকে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আসা নিয়ে হঠাৎ মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। তাদের চ্যালেঞ্জ ছিল যেকোনো মূল্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর ঠোকানো। এই উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে চালায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অবস্থান নিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে থাকেন। মুখে ইসলামের কথা বলে চালাতে থাকেন ইসলাম বিরোধী নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি রাষ্ট্র বিরোধী, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকেন সাধারণ মুসলিমদের মাঝে। শাপলা চত্বরের ঘটনার পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন নিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে মরিয়া এখন হেফাজত।
সম্প্রতি আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের পন্থা অবলম্বন করেছে হেফাজত। আর তাদেরকে কখনো নেপথ্যে, কখনো কৌশলে কখনও বা প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে জামায়াতিরা। মূলত জামায়াতের বি- টিম হিসেবে কাজ করছে হেফাজত। তাদেরকে জামায়াতের ভার্চুয়াল সংস্করণও বলছেন কেউ কেউ। জামায়াত এবং হেফাজতের উদ্দেশ্য অভিন্ন। জামাতের মিত্ররা বিভিন্ন কৌশলে এদেরকে পেট্রোনাইজ করছে, পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাদরাসা-কেন্দ্রিক অনুদান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কওমি মাদরাসার নামে যে অনুদান আসে তার বড় একটি অংশ ব্যয় হচ্ছে হেফাজতিদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা বলে বিদেশ থেকে প্রেরিত অনুদান ব্যয় হচ্ছে হেফাজতের নাশকতায়। তবে বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পন্থায়ই বেশি অর্থ আসছে হেফাজতিদের কাছে। হুন্ডির মাধ্যমে এসব অর্থ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিয়মিত আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে মানবতা বিরোধী অপরাধে দলের একের পর এক শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিসহ, বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত হওয়ার কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জামায়াত। নিবন্ধন না থাকায় দলীয় প্রতীক নিয়ে দলগতভাবে নির্বাচনও করতে পারছে না জামায়াতিরা। যার ফলে বাস্তবায়িত হচ্ছে না তাদের উদ্দেশ্য। এই পরিস্থিতিতে হেফাজতের কাঁধে ভর দেয়া ছাড়া তাদের কোনো বিকল্প পথ নেই। কওমি মাদরাসা ভিত্তিক এ সংগঠনটি নিজেদেরকে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দাবি করলেও সময়ের সাথে সাথে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে যায়। রাজনীতিতে বৃদ্ধি পায় তাদের চাহিদা। ২০১৩ সালে সরকার পতনের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে বিএনপি এবং জামায়াত হেফাজতকে ব্যবহার করে। কিন্তু সরকার কঠোরভাবে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করায় ভেস্তে যায় তাদের পরিকল্পনা। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর দৃশ্যপট বদলে যায়। জুনায়েদ বাবু নগরীর হাতে চলে আসে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ। বাবু নগরী উগ্র মৌলবাদী এবং বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত। ৫ মে ঢাকা তাণ্ডবের ঘটনায় বাবু নগরীকে গ্রেফতার করা হয়। ক্ষমতাসীনদের প্রতি এ কারণে বিশাল ক্ষোভ রয়েছে তার। সাম্প্রতিক সময়ে বাবু নগরীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য একেবারেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার মাধ্যমে ইস্যু তৈরিই ছিল তার মূল লক্ষ্য। রাজনীতির মাঠকে উত্তপ্ত করে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, বিএনপি জামায়াতকে সুবিধা দেয়ার জন্যই হেফাজতকে ব্যবহার করা হয়। আর এই অপপ্রয়াসের অন্যতম হোতা হয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে একের পর এক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে তিনি চলে আসেন আলোচনায়। পাশাপাশি তার স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থী বক্তব্য রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
সাম্প্রতিককালে বিএনপি এবং জামায়াত রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ফলে হেফাজতের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে তাদের দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে একাট্টা হয় তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, জামায়াত তাদেরকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বাবু নগরী এবং মামুনুলের মনে রাজনৈতিক অভিলাষ থাকায় জামায়াত তাদেরকে সহজেই নিজেদের বি টিম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। সর্বশেষ হরতালের সময়, পিকেটিং করেছে শিবির ক্যাডাররা। এরপর জামায়াত-হেফাজতের সখ্যের বিষয়টি একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানেও বিষয়টি উঠে এসেছে। জামায়াত-হেফাজত যে ভাই ভাই তার তথ্যপ্রমাণও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকার পল্টন এলাকা, শাল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের অন্যান্য যেসব স্থানে তারা হামলা চালিয়েছে, তাতে করে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী স্বরূপই উন্মোচিত হয়েছে। যার সাথে জামাতের হুবহু মিল রয়েছে। বিএনপি কিংবা জামায়াতের কোনো নেতার বাড়িতে তারা হামলা চালায়নি। তারা নাশকতামূলক যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তাতে করে বাংলাদেশের প্রতি তাদের যে আনুগত্য নেই সেটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না। তারা মূল ধারাকে পুরোপুরি অস্বীকার করছে। তাদের অবস্থান ‘রুল অব এন্ট্রি পিপল’ হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে হেফাজতকে মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার।
কঠোর অবস্থানে সরকার, কোণঠাসা হেফাজতঃ
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজত নেতাদের ওপর বৃদ্ধি করা হয়েছে নজরদারি। উদ্ভূত পরিস্থিতি সংগঠনের শীর্ষ নেতা মামুনুল হকের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্ট কাণ্ডের পর তিনটি বিয়ের বিষয় প্রকাশ্যে আসায় এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে হেফাজত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারা দেশে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় তিন শতাধিক হেফাজত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বিতর্ক সহায়ক হয়েছে। বিষয়টি হেফাজত নেতাদের ভাবমূর্তিকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, তাদের ভণ্ডামিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ পর্যন্ত হেফাজতের শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীদের নাশকতামূলক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজত ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থসম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদী, হেফাজতে ইসলামের অনুসারী ও প্রভাবশালী বক্তা ওয়াসেক বিল্লাহ নোমানী, হেফাজতে ইসলামের অনুসারী ও মতুর্জাবাদ জামে মসজিদের খতিব লোকমান হোসেন আমিনী, হেফাজতে ইসলামের প্রভাবশালী নেতা ও সংগঠনটির সহকারী মহাসচিব মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুফতি বশির উল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরিফ উল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব, হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ও ধর্মীয় বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। জেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারসহ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীসহ ওখানে বসে যেখানে যা প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা সেই ব্যবস্থাটি করবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়ে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে। বিগত দিনগুলোর মতো ভবিষ্যতেও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড দমনে সংস্থাগুলোর পুরোপুরি সক্ষমতা রয়েছে। ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের যারা জড়িত, সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’
হেফাজত নেতাদের ভণ্ড বললেন ৬২ আলেমঃ
হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতাদের ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৬২ জন আলেম। রোববার (১৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তারা।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা যিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় সব সময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিয়ে গরম করে রাখতেন। তিনি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে অন্য একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে জনরোষের মুখে পড়েন। পরবর্তীতে প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে বুকিং করে ওই নারীর সঙ্গে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন।’
তারা বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব এ ধরনের ভণ্ড, নারী লোভী, দুশ্চরিত্র ব্যক্তির পক্ষ অবলম্বন করে বিবৃতি দেন যা অত্যন্ত নেক্কারজনক ও নিন্দনীয়। বিবৃতিতে কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি হেফাজত নেতাদের বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাব- এসব মতলববাজ, রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদৃষ্ট আলেমদের বর্জনের জন্য। যাতে তারা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে না পারে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী আলেম ওলামাদের মধ্যে রয়েছেন- ড. মুফতি কাফিল উদ্দিন সরকার সালেহী, মাওলানা হোসাইন মুরতাজা, মাওলানা আজমির বিন কাসিমী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা নোমান ফারুকী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ বিন সাইদ জালালাবাদী প্রমুখ।
জোরালো হচ্ছে নিষিদ্ধের দাবিঃ
একের পর এক বিতর্কিত ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালার কারণে হেফাজতে ইসলামকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে সোচ্চার রয়েছেন স্বাধীনতার পক্ষের সংগঠনগুলো। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সময় হেফাজতে ইসলামের দেশব্যাপী ‘মহাতাণ্ডবের কঠোর নিন্দা’ এবং ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাসের রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ৩১ মার্চ এক বিবৃতিতে হেফাজতে ইসলামের সব ধরনের সভা সমাবেশ বন্ধ করা এবং হেফাজত-জামায়াতের মতো ‘স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন’ নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তাদের বিবৃবিতে বলেছে, ‘পূর্বাহ্ণে ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী সন্ত্রাসী হেফাজতে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব উদযাপন বানচাল করার জন্য সারা দেশে একের পর ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছে। বিশেষভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তারা নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন এবং তার স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করেছে। তারা পৈশাচিকতায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে তা আমাদের একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং পরবর্তীকালে আল কায়দা ও আইএস-এর নৃশংস বর্বরতাকে হার মানায়।
সুনামগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও একইভাবে হামলা এবং উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হেফাজতের তাণ্ডবে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততার কথা গণমাধ্যমে বলা হলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, যা হেফাজতিদের অধিকতর নৃশংসতায় প্ররোচিত করেছে। আমরা বহুবার বলেছি, একাত্তরে যারা ধর্মের নামে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, তাদেরই রাজনৈতিক ও আদর্শিক উত্তরাধিকারী হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম, যারা ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের তালেবানি আফগানিস্তান বানাতে চায়।’
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুননবী, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, কথাশিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ডা. কাজী কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীর উত্তম, ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, ড. নূরন নবী, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদজায়া সালমা হক, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কলামিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, ড. ফরিদা মজিদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, অধ্যাপক আয়েশ উদ্দিন, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডা. ইকবাল কবীর, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান শহীদ প্রমুখ।
অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার দাবিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে স্মারকলিপি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন। গত ৭ এপ্রিল ই-মেইলে পাঠানো ওই স্মারকলিপির একটি করে অনুলিপি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট, কংগ্রেসের উভয়কক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিকেও দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপি পাঠানো সংগঠনগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখা, যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভোটারনস এবং ইউএসএ। স্মারকলিপিতে হেফাজতকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, সংগঠনটির সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা না হলে শুধু বাংলাদেশই নয় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি সুরক্ষা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।(সূত্র: সিটি নিউজ ঢাকা)

জে/21 এপ্রিল





প্রয়োজনে : ০১৭১১-১৩৪৩৫৫
Design By MrHostBD
Copy link
Powered by Social Snap